এই দিবসটি উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলে সরকার লেঠেল বাহিনীর দমন-পীড়ন। ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হলো। ক্লারা ছিলেন জার্মান রাজনীতিবিদ; জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের একজন। এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বৎসর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। অতঃপর ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। এরপর থেকে সারা পৃথিবী জুড়েই পালিত হচ্ছে দিনটি নারীর সমঅধিকার আদায়ের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করার অভীপ্সা নিয়ে। ২০২১ এর ৮ ই মার্চ ৪৭ তম আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হতে চলেছে।
নারীরা কি আজ সত্যি সুরক্ষিত ?
তথাকথিত পুরুষসমাজের অনেকেই নাক শিটকোবেন হয়তো— এ আবার কী কথা! কিন্তু নারীদের জন্য অর্পিত দিবসের প্রাক্কালে সত্য কথাটা সত্য দিয়ে বিচার করার সময় এসেছে। আমরা যতই মুখে বলি না কেন, নারী পুরুষ সমান সমান বা সংবিধানে যতই নারী পুরুষের সমান অধিকার স্বীকৃত হোক না কেন, কোথাও না কোথাও আজও নারীদের চূড়ান্ত অবহেলিত ও অমর্যাদাকর জীবনযাপনই করে যেতে হয়। প্রাচীন কালে ঠিক যে সময় থেকে সমাজে নারী পুরুষ বিভাজন এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির উদ্ভব ঘটেছে, তখন থেকেই নারীর উপর পুরুষের আধিপত্য কায়েম হয়েছে।
কিন্তু যে পুরুষ নারীকে তাঁর অধিনস্ত বা ভোগ্য হিসেবে ভাবছেন, তিনি কি এক বারও ভেবে দেখেছেন যে, নারী গর্ভেই তাঁর জন্ম, নারী না থাকলে এই পৃথিবীতে তাঁর আসাই হত না। নারীশক্তির কথা ভুলে গিয়ে বর্তমান সমাজব্যবস্থায় নারীকে শুধুমাত্র ভোগ্যপণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। যে নারীশক্তি দ্বারা জগৎ ও সংসার চলমান সেই নারীশক্তি কে পণ্যে রূপান্তরিত করে নারী অহমিকায় আঘাত হেনে নারীকে অবমাননা করার মধ্যে দিয়ে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ যেন কোথাও না কোথাও যুদ্ধ জয়ের শৌর্য লাভ করে। তাই তো সমাজ-সংসার জুড়ে সর্বত্রই নারীদের পুরুষের হাতের খেলার পাত্র করে রাখার একটা ব্যর্থ প্রচেষ্টা চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। তাই তো দ্রৌপদীকে দ্যুতপণে বিক্রি করা হয়, সীতাকে তাই অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়। আর শবরীমালায় প্রবেশের জন্য তাই আজও নারীকে লড়াই করতে হয়।
আধুনিক সমাজের সর্বস্তরেও আজ নারীরা অবমাননার শিকার। মানবতাবোধ কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছে পুরো সমাজটারই। তাই মেয়েরাই আজ সবচেয়ে অবজ্ঞার পাত্র। নারীশরীর আজ পণ্যে রূপান্তরিত হয়েছে— সিনেমা, টিভির পর্দায় ছোখ রাখলেই প্রতিনিয়ত উপলব্ধি করতে পারি। পণ্য থেকে প্রসাধনী, পানশালা থেকে পাথর খাদান— সর্বত্রই নারীদের যান্ত্রিক ভাবে ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন যে ভাবে বেড়ে চলেছে, তাতে শঙ্কিত হতে হচ্ছে।
নারী ধর্ষণের মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা প্রতিনিয়ত যে ভাবে বেড়ে চলেছে, তাতে বোঝা যায় পুরুষের কাছে নারীর মূল্যায়ন কোথায় সীমাবদ্ধ। শিশু থেকে সন্ন্যাসিনী, আট থেকে আশি— সকলেই যেখানে নারী দেহ হিসেবে ভাবিত ও চিহ্নিত হচ্ছেন। ভারত সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নারীবাদী আন্দোলনকারীরা নারীদের প্রতি অবমাননাকর আচরণের বিরুদ্ধে প্রবল জনমত গঠনের চেষ্টা করে চলেছেন নিরন্তর। শুধুমাত্র প্রতি বছর ৮ ই মার্চ ঘটা করে নারীদিবস পালন না করে, প্রতিটি দিনই যদি নারীর মর্যাদা লুণ্ঠিত হতে না দেওয়ার শপথ গ্রহণ করা যায়, তবে সেটাই হবে নারীদিবসের প্রকৃত সার্থকতা।
নারীসমাজ এর প্রতি অত্যাচার এবং সেই অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সময় চলে এসেছে। লেখিকা মধুমিতা চক্রবর্তীর দুটি বই ‘ পাচার ‘ এবং ‘ ফেয়ারওয়েল ‘ খুবই প্রাসঙ্গিক। বইদুটির বিষয়বস্তু এখানে তুলে ধরা হলো।
পাচার
নারী পাচার একটা ভয়াবহ সামাজিক সমস্যা। আইন করেও এই অপরাধ কমানো যাচ্ছেনা। এর একটি বৃহৎ কারণ যদি হয় দারিদ্র তাহলে আর একটি বৃহৎ কারণ হলো সচেতনার অভাব। মেয়েদের ভোগপণ্য হিসাবে দেখার প্রবণতা সমাজের সব স্তরেই বর্তমান। যন্ত্রনায় বিদ্ধ হয় পাচার হওয়া মেয়েটি। উপন্যাস “পাচার” এ লেখিকা মধুমিতা চক্রবর্তী সেইসব অত্যাচার ও অমানুষিক শোষণের কাহিনী তুলে ধরেছেন।
গ্রন্থটি অনলাইনে সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন – BUY NOW অথবা কলেজস্ট্রিট এ আমাদের স্টোর থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। যোগাযোগ – 15, Shyama Charan Dey St, College Street, Kolkata – 700073, West Bengal, India
ফেয়ারওয়েল
কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের অনুপ্রবেশ যত বৃদ্ধি পাচ্ছে যৌন নিগ্রহের নানা ঘটনা চোখে পড়ছে ততই। যৌন হেনস্থার প্রকৃতি ও পদ্ধতিও বিচিত্র। অনেক সময় তা বর্বর, অনেক ক্ষেত্রে তা সুক্ষ চালাকির দ্বারা আবৃত। কিন্তু মূল উদ্দেশ্য একই। এর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে নারীকর্মীর জীবন – জীবিকা ব্যক্তিসত্ত্বা ও কর্মীসত্ত্বা।
বর্তমান উপন্যাসে ফুটে উঠেছে সেরকমই একাধিক নারী নিগ্রহের ঘটনা এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে এক অনমনীয় এবং প্রতিবাদী নারী চরিত্রের টানটান লড়াইয়ের কথা। সাহস ও বুদ্ধির মিশেলে আইনের ফাঁক গলে অপরাধীকে যিনি বেরিয়ে যেতে দেন না।
গ্রন্থটি অনলাইনে সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন – BUY NOW অথবা কলেজস্ট্রিট এ আমাদের স্টোর থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। যোগাযোগ – 15, Shyama Charan Dey St, College Street, Kolkata – 700073, West Bengal, India